খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ আষাঢ়, ১৪৩১ | ১৭ জুন, ২০২৪

Breaking News

  কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্ঘটনায় মৃত বেড়ে ১৫, আহত ৬০
  নেপালকে হারিয়ে ১৭ বছরের আক্ষেপ ঘোচালো বাংলাদেশ
  ত্যাগের মহিমায় পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা, দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর

রাতে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ সংস্কার, দুশ্চিন্তায় উপকূলবাসীর নির্ঘুম রাত

তরিকুল ইসলাম

ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূ‌লের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। উপকূলের মানুষের খাওয়া-ঘুম হারাম হয়ে গেছে। দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে অনেকে। রাত জেগে স্বেচ্ছাশ্রমে দুর্বল বেড়িবাঁধ সংস্কার করার চিত্র দেখা গেছে। সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে ইতোমধ্যে মানুষ আসা শুরু করেছে। রাতে হালকা বাতাস ও গুম গুম আওয়া‌জে আতঙ্ক ছ‌ড়ি‌য়ে‌ছে। ভো‌রে বৃ‌ষ্টির দেখা‌ মে‌লে।

২৫ মে রাতে মোংলা বন্দরে ৭ নং বিপদ সংকেত ঘোষণার পরে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকায় আতঙ্ক বাড়ে। সাথে সাথে এসব উপকূল এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়। মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এসব এলাকায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এদিকে, দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ বেড়িবাঁধই দুর্বল। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, কয়রার ৬৩০ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ১০ কিলোমিটার বেড়িবাধ ঝুঁকিপূর্ণ।আর সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর আওতায় বেড়িবাঁধ রয়েছে ৩৮০ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। বারবার বাঁধ ভাঙ্গায় উপকূলবাসী সংকেত পেলেই আতঙ্কে থাকেন।

 

খুলনার ও সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকায় ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। আইলার সেই ক্ষত কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৪ মে ফণী, একই বছরের ১০ নভেম্বর বুলবুল আঘাত হানে। ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালের ২৬ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ২০২২ সালের ১২ মে আসনি, এরপর একই বছরের ২৫ অক্টোবর সিত্রাং এবং সর্বশেষ ‘মোখা’ আঘাত হানে। এসব ঘূর্ণিঝড়ের সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় কয়রা, দাকোপ, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। সর্বশেষ উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাত হানার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের অনেক জায়গা দিয়ে চুইয়ে পানি ঢুকছে বলে জানা যায়। সুভদ্রাকাটি এলাকার একটি জরাজীর্ণ বাঁধ গভীর রাতে স্বেচ্ছাশ্রমে এলাকাবাসী মেরামত করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সেখানে জিও ব্যাগের ব্যবস্থা করা হয়। আর এলাকাবাসী জিও ব্যাগে মাটি ভরে রাস্তা সংস্কার করেন। যে কোন সময় দুর্বল বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা। এমন আশংকা নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে খুলনা জেলার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনির ও বাগেরহাট উপকূলের মানুষ।

কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের বাঁধের পাশে বসবাসকারী আখতারুজ্জামান ও বিল্লাল হোসেন জানান, আইলার সময় ঘাঁটাখালি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়। এরপরে প্রায় দুই মাস আশ্রয় কেন্দ্রে থাকেন। সেখান থেকে বাঁধের উপরে ঝুপড়ি বেঁধে বসবাস শুরু করেন। একপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের কথায় বাঁধের স্লোবে পুনরায় ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। আইলার ১৫ বছর পরেও তারা নিজ ঠিকানায় ফিরতে পারেননি। সেখানে বাঁধের পাশে প্রায় শতাধিক পরিবার রয়েছে। তারা রেমাল ঝড়ের সংকেত পেয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।

কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আছের আলী মোড়ল জানান, তার ইউনিয়নের ঘড়িলাল থেকে চরামুখা খেয়াঘাট, খেয়াঘাট থেকে হলদিবুনিয়া পর্যন্ত বেশি ঝুঁর্কিপূর্ণ।

সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার বাসিন্দা শাহিন আলম জানান, ইউনিয়নের অধিকাংশ বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। কয়েকদিন আগে এলাকার একটি বেড়িবাঁধে ধস নামে। তারা খুবই আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দিন জানান, আমাদের আওতায় বেড়িবাঁধ রয়েছে ৩৮০ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে গাবুরায় মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কিছু জায়গায় সমস্যা রয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে কোন সমস্যা হলে সে জন্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিভাগ-২) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম ব‌লেন, আমার এরিয়ার মধ্যে ৬৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এছাড়া তাৎক্ষণিক কোন সমস্যা হলে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ আশ্রয় ও ৫৬০টি গবাদি পশু রাখা যাবে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!